কোভিড-১৯ এর জ্বর এবং সাধারণ জ্বরে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। জ্বরের তাপমাত্রার পার্থক্য ছাড়াও কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। যা নিশ্চিত করে এটি কোভিড-১৯ না সাধারণ জ্বর।
কারো জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পেলে কেউ কেউ নিজেকে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেন। কিন্তু কেউ কেউ একে বিকৃত মস্তিষ্কের আচরণ বলে মনে করেন।
চিকিৎসকরা মনে করেন, আতঙ্কিত না হয়ে করোনা মহামারীর সময় প্রতিটি জ্বর নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। জ্বরের কারণ অনুসন্ধানসহ ভাইরাস সম্পর্কে জানতে হবে। বর্ষা মৌসুম সম্পর্কিত জ্বরগুলোর মাঝে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, লেপটোসপাইরোসিস, আন্ত্রিক জ্বর, ভাইরাল হেপাটাইসিস জ্বর ইত্যাদি রয়েছে। তাই সাধারণ জ্বর ও কোভিড জ্বর আলাদা করা প্রয়োজন।
আপনার যা যা জানা প্রয়োজন
উভয় জ্বর শ্বসনতন্ত্রের দুটি ভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি। ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং কোভিড-১৯ দুটি আলাদা ভাইরাস দ্বারা হয়। সমস্যা হচ্ছে এদের বেশ কিছু লক্ষণ প্রায় একই রকম হয়। তাই শুধু লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ভাইরাসটি আলাদা করা মুশকিল। তাই রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। বৈশিষ্ট্যগুলো একই হলেও দুটির মাঝে মূল পার্থক্য থেকে যায় এবং প্রতিদিন এ সম্পর্কে আরও নতুন কিছু জানা যাচ্ছে।
উভয় ভাইরাসের মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ বিশিষ্ট সমূহ হল
প্রথমেই জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগা শুরু,
কাশি,
শ্বাসকষ্ট বা তীব্র শ্বাসকষ্ট (শ্বাসকষ্টের রোগীদের),
ক্লান্তি,
গলাব্যথা,
নাক দিয়ে পানি ঝরা বা নাক বন্ধ হওয়া,
পেশি ব্যথা বা শরীর ব্যথা,
মাথা ব্যথা,
বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া (বয়স্কদের তুলনায় শিশুদেরক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়)।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলোর মধ্যে ফ্লু থেকে আলাদা একটি উপসর্গ হচ্ছে অনেকে খাবারের স্বাদ বা গন্ধ পান না।
কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?
কোভিড-১৯ এবং ফ্লু মূলত দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুস্থতা এবং জটিলতা সৃষ্টি করে। উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্করা, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকেরা এবং গর্ভবতী মহিলাগণ।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে চিকিৎসারত শিশুদের ক্ষেত্রে ফ্লু এবং কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।
জটিলতা সমূহ
যারা সাধারণ ফ্লু’তে আক্রান্ত হন তারা কয়েক দিন থেকে দু সপ্তাহের মাঝে সেরে উঠেন। তবে কারো কারো জটিলতা দেখা দিতে পারে। কোভিড-১৯ এর সাথে যুক্ত অতিরিক্ত জটিলতাগুলো হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, মস্তিষ্ক বা পায়ের শিরা বা ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোমএর কারণ হতে পারে।
যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে
নিউমোনিয়া,
শ্বাস যন্ত্রের ব্যর্থতা,
শ্বাস প্রশ্বাসের তীব্র সংক্রামণ লক্ষণ,
সেপ্সিস,
হার্ট অ্যাটাক, বা স্ট্রোক,
বহু অঙ্গ ব্যর্থতা,
বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার অবনতি (ফুসফুস, হার্ট, স্নায়ুতন্ত্র বা ডায়াবেটিস),
হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক বা পেশী টিস্যু স্ফীত হওয়া,
গৌণ ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক (দ্বিতীয় বারের মত ফ্লু বা কোভিড ১৯ এর সাথে অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া সংক্রামণ)।
চিকিৎসা সমূহ
ইনফ্লুয়ঞ্জা চিকিৎসার জন্য ওজিলতামাভির ওষুধটি ব্যবহৃত হয়, এটি এফডিএ কর্তৃক অনুমোদিত। এছাড়াও ডাক্তারগণ বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন।
কোভিড-১৯ এর কোন কার্যকর চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নেই। তবে অনেক দেশে রেমডিসিভির ব্যবহৃত হয়। তবে রেমডিসিভির এফডিএ কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
টাইমস/তরী/এনজে